Monday, April 7, 2014

'মায়াসক্ত'

by- আসলাম মালিক
প্রায় তিন বছর পর তারাকান্দি যাচ্ছি।উদ্দেশ্য মাসুদার সাথে দেখা করব।মনটা তাই খুব খুশি।সেই তিন বছর আগে ওকে দেখেছিলাম,আর দেখা হয়নি।সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সবকিছু বদলে যায়।মেয়েটা কি আগের মতোই আছে নাকি অনেকখানি বদলে গেছে?
মাসুদার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল ওর বিয়েতে।বিয়েটা ওর সম্মতিতেই হয়েছিল।বর উচ্চশিক্ষিত।ভদ্র চেহারার লোকটি সরকারি চাকুরিজীবি ছিলেন।মাসুদার বাবা মেয়ের জন্য একটা সরকারি চাকুরে বরই খুঁজছিলেন।লোকটা ভীষণ ভাগ্যবান।বেঁচে থেকেই নিজের মেজো মেয়েকে পছন্দমতো পাত্রের হাতে তুলে দিতে পেরেছিলেন।পাগলের মতো কি সব ভাবছি!গাড়ি খুব দ্রুত চলছে তবু রাস্তা বেশি মনে হচ্ছে।আর কতদূর...
মাসুদার বাবা যমুনা সার কারখানার একজন কর্মকর্তা।পরিবার সহ তারাকান্দি কলোনীতে থাকেন।মাসুদা সন্তান সম্ভবা।আমি জানি ও এখন কলোনীতেই আছে।মেয়েদের প্রথম সন্তান নাকি তার বাবার বাড়িতে হয়।তাই আমিও কলোনীতেই যাচ্ছি।কারণ ওখানে গেলেই আমি মাসুদার দেখা পাবো।তিন বছর পর আবারও প্রাণভরে দেখব ওকে।ওর অজান্তেই জাগিয়ে তুলবো আমার সুপ্ত ভালবাসাকে।যে ভালবাসার কথা মাসুদা কোনদিন জানেনি-বোঝেনি এমনকি জানতেও চায়নি কখনো।
তারাকান্দির মাটিতে পা রাখার পর বুঝলাম অনেক পাল্টে গেছে আমার প্রিয় এলাকাটা।এ অঞ্চলের মাটির বুকে গজিয়ে উঠেছে অনেক বহুতল ভবন।সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সবই পাল্টায়।মাসুদাও তেমনিভাবে পাল্টে গিয়েছিল।আমি স্বপ্নেও ভাবিনি ও বিয়েতে রাজি হবে।থাক ওসব...
কলোনীর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।ঢুকতে সাহস পাচ্ছি না।কিছু কেনা দরকার।কারণ আজ ওর বাসায় আমি প্রথম যাচ্ছি তাও আবার একটা বিশেষ সময়ে।আচ্ছা মাসুদার ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে?ছেলে হলে আমি খুব খুশি হবো।একসময় ভাবতাম আমার মেয়ের প্রথম কান্না শুনবে মাসুদা।পরম যত্নে আমার মেয়েকে বুকে টেনে নেবে।আমি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখব আমার জীবনের সবচেয়ে মায়াবী মূহুর্ত।কিন্তু তা হয়নি।মানুষের সকল আশা পূর্ণতার ছোঁয়া পায়না।
কলিংবেল টিপে দাঁড়িয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর দরজা খুললো ১৭-১৮ বছরের একটা মেয়ে।ও আমাকে না চিনলেও আমি ওকে ঠিকই চিনেছি।ঝর্ণা,মাসুদার ছোট বোন।আমার মাসুদার আলতাসুন্দরী।কথাটা মনে হয় ভুল বললাম!মাসুদা কি কখনো আমার ছিল?না,ছিলনা।
বাসার সামনে এতগুলো ব্যাগ হাতে অচেনা একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেয়েটা সম্ভবত অবাক হয়েছে।
:ঝর্ণা বলতো আমি কে?
-আপনি রিসাদ ভাইয়া,তাই না?আসুন ভিতরে আসুন...
আমাকে দেখে ও যতখানি বিস্মিত হয়েছে তার চেয়ে বেশি বিস্মিত আমি ওর কথা শুনে।মেয়েটা আমাকে চিনলো কিভাবে?ও তো আজকের আগে আমাকে কখনো দেখেইনি।
এই প্রথম আমি ওদের ঘরের ভিতর পা রাখলাম।সবকিছু কেমন যেন নীরব নীরব!বাসার সবার সাথে পরিচিত হলাম।এর আগে মাসুদার বিয়েতে আমি এসেছিলাম,কিন্তু আমাকে কেউ চিনতো না তখন ও ছাড়া।মাসুদাকে দেখেই চলে গিয়েছিলাম সেদিন।আর আসা হয়নি।সত্যি কথা বলতে আমারই আসতে ইচ্ছে করেনি।ও অবশ্য কয়েকবার বলেছিল।কিন্তু আমি ব্যস্ততার অজুহাতে এড়িয়ে গিয়েছিলাম।
খেয়াল করলাম সবাই যেন কি একটা লুকাচ্ছে আমার কাছে।কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।আমি মাসুদার কথা বলতেই ঝর্ণা আমাকে পাশের ঘরে নিয়ে গেল।সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা দোলনায় ঘুমাচ্ছে।অবিকল মাসুদার প্রতিচ্ছবি!ঝর্ণা বলল,আপুর মেয়ে।আমি ধৈর্য্য হারিয়ে বললাম,মাসুদা কোথায়?ও বলল,চলুন বাইরে যাই ভাইয়া।আমি উত্তর দেয়ার আগেই ঝর্ণা বাইরে চলে গেল।আমিও ওকে অনুসরণ করলাম।মনের মধ্যে একটা খটকা লাগলো।বাসার সবাই মাসুদার বিষয়ে এত নীরব কেন?
ঝর্ণা আমাকে বাড়ির পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছটার কাছে নিয়ে গিয়ে তর্জনী দ্বারা নতুন মাটির দিকে ইঙ্গিত করলো।হঠাত্‍ আমার শরীর অবশ হয়ে গেল।থপ করে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম।নতুন মাটি কৃষ্ণচূড়ায় লাল হয়ে আছে।দু'হাতে মাটি তুলে ঘ্রাণ নেয়ার চেষ্টা করলাম।আশ্চর্য!মাটিতে ঠিক মাসুদার শরীরের ঘ্রাণ।কতক্ষণ বসেছিলাম জানি না।ঝর্ণার হাতের স্পর্শে চেতনা ফিরল।ওর সাথে বাসায় গেলাম।শুনলাম মেয়েটাকে জন্ম দেয়ার সপ্তাহখানেক পরেই মাসুদা চলে গেছে ওপারে।আর শুনলাম,মাসুদার স্বামী নাকি এই মেয়েকে নিতে নারাজ।তার পরিবার নাকি ছেলে চেয়েছিল।হায়রে মানুষ..!
আমি মাসুদার মেয়েটিকে ওদের কাছে চাইলাম।ওরা খুব সহজেই রাজি হয়ে গেল।মাসুদার শেষ ইচ্ছাও নাকি এটাই ছিল।মেয়েটাকে বুকে নিয়ে ওদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।
আমার মেয়েটা এখন কথা বলতে পারে,হাঁটতে পারে।বাবা বাবা বলে ডাকে।রাতে একসাথে খাবে বলে আমার ফেরার পথ চেয়ে বসে থাকে।কিছুদিন যাবত্‍ পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি।দেখি কতদিন এভাবে থাকা যায়।মেয়েটার দিকে তাকালেই দুনিয়াদারী সব ভুলে যাই।শুধু মনে হয় "মায়া" আমার মেয়ে,আমার মাসুদার মেয়ে।

Sunday, April 6, 2014

এরই নাম হয়তোবা ভালোবাসা

by কাজী ওয়ালীউল হাসান
তড়িঘড়ি করে বাস স্ট্যান্ডে প্রবেশ করে সকাল। অলরেডি ৫ মিনিট লেট।বাসটা বুঝি ছেড়েই দিল। নাহ! লেট হয়নি। বরং বাসই লেট। এখনও বাসস্ট্যান্ডে বাস এসে পৌছায় নি। মানুষের ভীড় ঠেলে বাস স্ট্যান্ডের এককোণার চেয়ারে বসে সে। চোখ যায় পাশে বসে থাকা রমনীর দিকে। কথাবার্তা এমনেতেই একটু বেশিই বলে সে। তবুও অপরিচিত একজন মেয়ে; আগ বাড়িয়ে কথা বলাটা ঠিক হবে নাকি বুঝতে পারছে না। আড়চোখে তাকায় মেয়েটার দিকে। চশমা পরা। চোখ জোড়া দেখে মনে হচ্ছে একটু আগে বৃষ্টি বয়ে গেছে তার দুচোখ জুড়ে। এখনও তার আভা রয়ে গেছে। হাতের দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পেল ইয়া বড় একটা ব্যাগ।
চট করে একটা আইডিয়া নিয়ে নিল মেয়েটা সম্পর্কে। সকাল আবার মানুষের বাহ্যিক অবস্হা দেখে ভালো ধারনা নিতে পারে। এই মেয়ে নিশ্চয়ই বাসা থেকে পালিয়েছে। প্রেমিকের জন্য। শেষ মুহূর্তে হয়তো বাবা মা র কথা মনে পড়ছে তাই দু চোখ বেয়ে অশ্রুধারা। নয়তো প্রেমিক ধোকা দিয়েছে । তাই এখন ব্যর্থ মনে বাসায় ফেরত। যে কোন একটা হবেই। - সকাল মনে মনে ভাবে।
“ জিগ্যেস করবো নাকি মেয়েটাকে? নাহ! থাক, কি দরকার ”- মনের ভিতর একটা দোটানা ভাব। সকালের আবার সব কিছুতেই আগ্রহ একটু বেশি। একটু বেশি চটপটে আর কথা বলা টাইপ ছেলে। তবে শেষ পর্যন্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকে সে।
তবে সকাল যে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে তা ঠিকই আঁচ করতে পারে মেয়েটা। চোখদুটা ঘুড়িয়ে সকালের দিকে পড়তেই বিব্রত হয়ে পড়ে সকাল। মাথাটা আস্তে ঘুড়িয়ে নেয় সে।
সকাল প্রাইভেট একটি ফার্মে চাকরি করছে ১ বছর হবে। চট্রগ্রাম যাচ্ছে ছুটি নিয়ে। অনেকদিন মাকে দেখতে যাওয়া হয় না। মা আবার অনেক করে ধরেছে বিয়ে এবার তাকে করতেই হবে।
বাস কখন আসে কোন ঠিক নেই। সময়টা পার করা দরকার। এই মুহূর্তে ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলাই সময় কাটানোর একমাত্র ভালো উপায় মনে হচ্ছে। আসলে মেয়েটার প্রতি একটা কৌতুহল কাজ করছে সকালের। বাসা থেকে পালানোর কাহিনী শুনতে মন চাচ্ছে। কিন্তু কথা কিভাবে শুরু করা যায় তা বুঝতে পারছে না। নাম কিংবা কোথায় যাবেন এটা বলে শুরু করা যেতে পারে।
মেয়েটার দিকে মাথা ঘুরাতেই সে হাওয়া। কই গেল? আশেপাশের মানুষজনও কম মনে হচ্ছে। একটু পরে সকালের চোখ পরে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের দিকে। বাস অবশেষে আসল।
সবাই যে যার টিকেট অনুযায়ী বাসের সিটে বসছে। সকাল যেন তার কাংখিত সিটটাই পেল। তার পাশের সিটটি সেই মেয়ের। ভ্রমনটা মন্দ হবে না- সকাল ভাবে।
- আমি সকাল। আপনার নামটা?
মেয়েটা একটু বিরক্ত হল বুঝাই যাচ্ছে। তবুও সারাটা পথ উনার সাথেই যেতে হবে কথা না বলাটা খারাপ দেখায়।
- আলো।
- ও! মিষ্টি নাম। তা কোথায় যাচ্ছেন?
- চট্রগ্রাম।
- আমিও চট্রগ্রামে। মায়ের বাড়িতে। আপনি?
- আমি চট্রগ্রাম ভার্সিটিতে ৪র্থ বর্ষে পড়ি।
- ও
( সকালের মনটা খারাপ হয়ে গেল। তার ধারনাটা বোধহয় ভুল। মেয়ে বাসা থেকে পালায়ে আসে নাই। কিন্তু তার চোখের পানির রহস্যটা জানার আগ্রহ মোটেও কমলো না। আর কন্ঠও কাঁদো কাঁদো )
বাস ছেড়ে দিয়েছে। আপাতত সকাল আলো দুজনই চুপচাপ।
সকাল ভালো করে আলোর দিকে তাকালো। মেয়েটা আবার কাঁদছে। কোন এক বইতে সে পড়েছে মেয়েরা বেশি আবেগপ্রবন হয়। অনেক চেস্টা করেও নাকি কান্না তারা লুকিয়ে রাখতে পারে না।
- আপনার কি শরীর খারাপ? কাঁদছেন কেন জানতে পারি?
- আমার ইচ্ছা তাই। আপনার কোন সমস্যা?
মেয়েটার এমন কথায় একটু হতবাক হয়ে পড়ল সকাল। কিন্তু বুঝতে বাকি রইলো না এটা অধিক শোকের বহিঃপ্রকাশ। যে করেই হোক কারনটা জানতে হবে। আর এতটা পথ বাসে চুপ করে বসে থাকবে অমন ধৈর্য্য সকালের নেই।
- চুইংগাম খাবেন? আমার পকেটে ২টা আছে। ভাংগতি দিতে পারছিলো না ,তাই দুইটা কিনতে হয়েছিল।
আলো একটু কটমটভাবে তাকালো। কিছু বলা লাগলো না। চোখের ভাষাতেই সকাল বুঝে নিল জবাব।
- দেখেন.. কি সুন্দর সাদা বক। আর ঐ যে ওটা মাছরাঙা। সুন্দর না?
আলো একটুও তাকালো না। পারলে এখনি সিট চেন্জ করে সে। এমন বিরক্তকর লোক পাশে থাকলে ভ্রমনটাই নষ্ট। তবে আজকের ভ্রমন কোন ভ্রমন না। সে জানে সারা রাস্তা জুড়ে তার কান্নাই আসবে। হোস্টেলে কখন যাবে এটাই আশা। আর কখনওই বাসায় যাবে না বলে ঠিক করেছে সে।
সকাল কোনভাবেই মেয়েটাকে কথা বলাতে পারছে না। এদিকে তার জানার আগ্রহটাও বেড়েই চলেছে। মহা বিপদে পরা গেল।
- গান শুনবেন? ........ হেডফোনটা এগিয়ে দেয় সকাল।
- প্লিজ বিরক্ত কইরেন না তো। সমস্যা কি আপনার? আপনি কি পাগল? কখন
থেকে কথা বলেই যাচ্ছেন। আপনার যা ইচ্ছা করুন , আমার সাথে দয়া করে কথা বলবেন না।
আলো মেয়েটা আবার কাঁদা শুরু করেছে। এবার একটু ভয়ই পেয়ে গেল সকাল। বাসের মানুষ কি না কি ভেবে বসে?
মাথাটা জানালার দিকে ঘুরিয়ে নেয় সে। কোন ক্রমেই যেন আলোর দিকে চোখ না পরে। একা মনে চুইংগাম চিবাচ্ছে আর গান শুনছে।
বাসের চাকার শব্দ শোনা যাচ্ছে আর কিছু না । অধিকাংশ যাত্রীই ঘুমে। হেডফোন ভেদ করে মাঝে মাঝে আলোর কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবুও আলোর দিকে আর মুখ ফেরাবে না বলে ঠিক করেছে সে।
লোকটা একদমই চুপ হয়ে যাবে বুঝতে পারেনি আলো। এমন মানুষগুলো খুবই বিরক্তকর হয়। তার ধারনা ছিল একটু পর আবারো বকবক শুরু করবে। কিন্তু সকাল ছেলেটা ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে।
হঠাৎ হাতের স্পর্শে ঘুরে তাকায় সকাল। আলোর হাতের ছোঁয়া।
- চুইংগাম আছে? আমার বমি পাচ্ছে। থাকলে দেন।
সকাল এগিয়ে দেয়। কিন্তু কোন কথা বলে না।
- আসলে আমি সরি , অমন ব্যবহারের জন্য।
- ইটস ওকে।
আর কোন কথা নাই। আলো বুঝতে পারে সকাল নামের ছেলেটা অনেক কিছুই মনে করেছে। ব্যবহারটা হয়তো একটু বেশিই খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
- কি গান শুনেন? আমাকে দেয়া যাবে?
হেডফোনটা এগিয়ে দেয় সকাল। মেয়েটার হঠাৎ এমন কথাবার্তায় অবাক না হয়ে পারছে না। সেটাও বুঝতে বাকি নেই যে মেয়েটাও তার মত কথা না বলে থাকতে পারে না। কোন এক কারনে মেয়েটার মন অনেক বেশি খারাপ।
- আমার মনটা অনেক বেশি খারাপ। আপনার সাথে অমন ব্যবহারের জন্য দুঃখিত।
- কি জন্য খারাপ জানতে পারি?
দুজনই চুপ। আলো কিছু একটা চিন্তা করছে।
- আপনাকে বলা যায় । আপনি আমার পরিচিত কেউ নন। আসলে মানুষ তার কথা কাউকে না বলা পর্যন্ত অস্বস্তিতে ভোগে। আমার মনে হচ্ছে আপনাকে বললে হয়তো হাল্কা লাগবে।
- জ্বী, আপনি যদি চান আমাকে বলতে পারেন।
আবার কারও কোন কথা নেই। হঠাৎ আলোর কন্ঠ--------------
- আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন?
পাগল নাকি মেয়েটা। কথা নেই বার্তা নেই কি বলছে এসব? সকাল মনে করে তার ধারনাটই বোধহয় ঠিক। হয়তো মেয়েকে কোন ছেলে ছ্যাকা দিয়েছে।
- আমি আর আমার বাবার বাড়িতে ফিরে যাব না। এই জগতে আমার আপন বলতে কেউ নেই আর। আমার থাকার জায়গাও নেই। হোস্টেলের চার্জ দেয়াও এখন আমার জন্য অনেক কষ্টের।
(হু হু করে কেঁদে উঠে মেয়েটা)
- কি হয়েছে জানতে পারি? আমাকে খুলে বলতে পারেন চাইলে।
- আমার বাবা আর মায়ের সম্পর্ক কখনওই ভালো ছিল না। আমি তাদের একমাত্র সন্তান। আমার মা আমাকে খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু বাবা আমাকে দেখতে পারেন নাই কখনওই। তাদের মধ্যে ঝগড়ার কারনে মা আমাকে ছোটবেলা থেকেই বাসার বাইরে থেকে পড়িয়েছেন। আর মা ও কখনওই মুখ ফুটে কিছু বলেন নাই সমাজের ভয়ে। এক মাস আগে আমার মা আমাকে একা করে চলে গেছেন ওপাড়ে। কিন্তু আমাকে সংগে নিতে ভুলে গেছেন। আর বাবাও এই বয়সে এসে বিবাহ করেন আরেক মহিলাকে। আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন আমার পড়ার খরচ তিনি বহন করতে পারবেন না, তার অত টাকা নেই। অথচ ঐ মহিলাকে নতুন একটি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন। আমার মায়ের শেষ স্মৃতি গয়না গুলোও পড়িয়েছেন ঐ মহিলাকে। আমি কি জন্য ঐ বাসায় আর যাবো? ঐ বাসার সাথে সম্পর্ক চীরদিনের জন্য ছিন্ন।আমি আমার হোস্টেলে ফিরে যাচ্ছি কিন্তু জানি না খরচ কিভাবে দিব!!যে মানুষটি সারা জীবন আমাকে এবং মাকে কষ্ট দিয়েছে আমি আর কখনওই তার কাছে যাব না। আমি তার কেউ নই। আমাকে শুধু আগাছাই মনে করে। তার জীবনে আমার কোন প্রয়োজনই নেই।
আলো মেয়েটার দুচোখ বেয়ে বৃষ্টি পড়ছে। সকালের চোখও কখন ভিজে গিয়েছে টের পায়নি সে। মনের অজান্তে কখন আলোর ঐ দুই নয়নে সকালের হাত চলে গিয়েছে জানা নেই। মেয়েটার অশ্রু মুছে দিতে একটুও সংকোচ বোধ কাজ করলো না সকালের। কিছু মানুষ হয়তো কষ্টের জন্যই পৃথিবীতে আসে।
------------------------ ------------------------ ------------------------
সকালের সাথে আলোর বিয়ে হয়েছে আজ ২ বছর হবে। আলো তার মায়ের অভাব কখনোই বোধ করেনি এই ২ বছরে। আপন মেয়ের মতই ভালবাসেন সকালের মা। আর বাবা তো মেয়ে মেয়ে করতেই অস্থির। হয়তোবা এটাই ভালোবাসা। যে ভালোবাসার জন্য এতটা পথ কষ্ট করে আসতে হয়েছে আলোর।
মানুষের জীবনে খুব বেশি কিছুর দরকার নেই। কিন্তু যেটা খুব বেশি দরকার তারই নাম ভালোবাসা।

Sunday, February 9, 2014

ভালোবাসা????

শেষ কবে নীলার সাথে কথা হয়েছিলো মনে নেই । তবে ব্রেক আপ এর দিনটির বেশ মনে পরে.........

নীলা রাত জেগে পরাশুনা করে আমি জানতাম । সারাদিনের বেশ ধকল শেষে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম রাত ১১ টায় ই ।
কখনো ওকে রাতে ফোন দিয়ে বিরক্ত করতাম না । আসলে ওর ই নিষেধ ছিল । ফ্যামিলি প্রবলেম ।
সুখেই যাচ্ছিল আমাদের দিন গুলো ।

বন্ধুদের কাছ থেকে শুনতাম ইদানিং রাতে নাকি নীলার ফোন ওয়েটিং পাওয়া যায় । এসব কথা কানেই নিতাম না ।
নীলার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ছিল আমার ।

রাত ৩ টা । ঘুম ভেঙ্গে যায় এক দল আর্ত মানুষের চিৎকারে । কিছু বুঝে উঠার আগেই কে যেন বলে উঠলো
...... ভাবি মারা গেছেন ।
পুরো ব্যাপারটা বুঝে উঠতে কয়েক মিনিট সময় লেগেছিল ।
সবাই কে জানানোর জন্য ফোন দিচ্ছিলাম দুর্ঘটনা টি ।
নীলা ও বাদ যায় নি ।
এতো রাতে নীলার ফোন ওয়েটিং ।
৩ বার ফোন দেয়ার পর রিসিভ করে...............
: কি ব্যাপার । এতো রাতে ওয়েটিং ????
: হুম কি বলবা বল ।
: কি বলবো মানে ???
: কার সাথে কথা বলছিলে এতো রাতে ???
: তোমার কি দরকার ? কি বলবে সেটা বল ??
: ভাবি মারা গেছেন কিছুক্ষণ আগে । এটা জানাতেই ফোন দিয়েছিলাম । তাতে আমার কি ? এটা কাল সকালে বল্লেই তো পারতে...............
: ওকে সরি , ডিস্টার্ব করলাম , ভালো থেকো ।

তারপর আর কখনো কথা হয় নি । ৩ বছরের রিলেশন কে ইতি টেনে সেখানেই শেষ করেছিলো সব সম্পর্ক ।

কি দোষ ছিল আমার কারন টা আজও অজানা । একটি বারের জন্য জানার চেষ্টা ও করিনি ।  জানার চেষ্টা টাও এক ধরনের অনধিকার চর্চার মধ্যে পড়বে ।
নিঃসঙ্গ হয়ে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি আজ প্রায় বছর খানেক পর । প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম ওর কথা । দুঃস্বপ্ন , যত দ্রুত ভুলা যায় ততই ভালো ।

আনমনে কিছুক্ষণ ঘুরা ঘুরির পর হটাত সামনের দিকে তাকিয়েই হতবাক হয়ে গেলাম । এ যে নীলা । এতদিন পর আবার দেখতে পাবো ভাবিনি । একটি ছেলের হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছে । আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছে ।

গোমতীর পাড়ে বসে আছি ।
নিঃসঙ্গ পথিক । 

নিঃসঙ্গ সন্ধ্যা ।
মাথার অনেক উপর দিয়ে একটি চিল উড়ে গেল । ঘুরে ফিরে এক ই জায়গায় বারবার চক্কর দিচ্ছে চিল টা ।

নিঃশব্দে গাল বেয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল ।
সময় টা যেন খুব দ্রুত ই কেটে যাচ্ছে .........................................

Collected

আবেগী ভালোবাসা

-তোমাকে যদি আমি আই লাভ ইউ বলি ,তাহলে তুমি কি করবে।
-তোমাকে ঠাস করে একটা থাপ্পর দিবো ।
- ওউ তাহলে থাক বলবো না।
-না বললে তোমার দুটো গালে দুটো থাপ্পর দিবো।
- কি বলছো আই লাভ ইউ বললেও মারবে না বললেও.মারবে।
- হ্যা ।
-কিন্তু কেনো
-কারন তুমি যখন আমাকে আই লাভ ইউ বলবে তখন আমি তোমার উপর ভিষন রেগে গেছি এটা দেখানোর জন্য একটা থাপ্পর মারবো। আসলে কিন্তু আমি তোমার ওপর একদমি রেগে থাকবো না। তবে তোমাকে সেটা নিরবে হজম করে নিতে হবে।
-আর আই লাভ ইউ না বললে থাপ্পর মারবে কেনো ??
- কারন আমি তোমাকে ভআলোবাসি , আর তাই তোমাকেও আমায় ভালোবাসতে হবে । সো সে কারনে তোমাকেই আগে আমায় আই লাভ ইউ বলতে হবে। আর যদি তুমি না বল তাহলে আমি সত্যি সত্যি রেগে গিয়
মারবো। বুঝলে।
- না ।ভাবছি
-কি ভাবছো ??
-ভাবছি তোমার হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার কোন উপায়.আছে কিনা।
-কি বললে তুমি এত সহজে আমার হাত থেকে তুমি ছারা পাবে না। তারাতারি আমাকে আই লাভ ইউ
বলো।
-আচ্ছা ঠিক আছে বলছি। "আই লাভ ইউ"
- কি হল গালে হাত দিয়ে বসে আছো কেনো ??
- না মানে তুমি থাপ্পর মারবেতো তাই। আচ্ছা থাপ্পরটা একটু আস্তে মারা যাবে না।
- কি বলছো তুমি ,আমি কেনো তোমাকে মারবো।আর তুমি হঠাৎ আমাকে আই লাভ ইউ কেনো বলছো। কি হয়েছে তোমার??
- হ্যা না কই কিছু না কিছু না তো। একটু পা পা পানি খাওয়াবে প্লিজ।
- ঠিক আছে দিচ্ছি দাড়াও ।উফ কিযে করো না মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে।
- জান আমি না আমাদের প্রেমের প্রথম দিনেযে কথা গুলো হয়েছিলো সপ্নে দেখেছিলাম।
-ওউ সে জন্য তুমি হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে আমাকে আই লাভ ইউ বলছো।
-হ্যা জান ঠিক তাই।
-হুম আচ্ছা ঠিক আছে আই লাভ ইউ যখন বলেই ফেলেছো তাহলে সেদিনকার মত আমার হাতে একটা থাপ্পর খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পরো।

Wednesday, January 15, 2014

ভালোবাসা!!!!!!!!!!!!!

:হ্যালো,ফোন উঠাচ্ছনা কেন?
:আমি টিউশনিতে আছি।
:ছাত্র না ছাত্রী?
:ছাত্রী,তামান্না।
:কেন ছাত্রী পড়াইতেছ?তোমার কথা জানে?ওকে আমার কথা বল এখনি।
:আজব তো,ছাত্রীকে আমি গণিত পড়াচ্ছি,প্রেমবিদ্যা না যে তোমার কথা বলব!!

সাহেদ ফোনটা রেখে দিয়ে সাইলেন্ট করে রাখল।সুইস অফ করেও রাখতে পারছেনা জেরিনের কথা ভেবে।
জেরিনের সাথে সাহেদের দুই বছরের রিলেশন।মান অভিমানের সম্পর্কে বেশিরভাগ সময় সাহেদই কম্প্রোমাইজ করে।

গ্রাম থেকে পড়াশুনার জন্য হঠাৎই শহরে আসা।বাসার অবস্থা ভাল না।টুকটাক টিউশনি করে পড়ার খরচ চালাতে হয়।শহরে নতুন এসে টিউশনি পাওয়া অত সোজানা।আর যে টিউশনি পেয়েছে তা একটা মেয়ের্।প্রেমিকার দাবি এই টিউশনি ছেড়ে দিতে হবে।

মেয়েদের মন যে,এত সন্দেহপ্রবণ তা এখন হারে হারে টের পাচ্ছে।এই টিউশনি ছেড়ে দিলে সে কিভাবে চলবে।ভালই বিপদে পড়েছে।

এরপর আরো কিছুদিন কেটে আছে।সাহেদ এর সাথে জেরিনের সম্পর্কটা খারাপ হতে হতে চরমে।জেরিন এবার ভালই বেকে বসেছে।হয় প্রাইভেট ছাড়বে নাহলে জেরিনকে ছাড়তে হবে।কি করবে ও বুঝতে পারছেনা।
তামান্নার টিউশনি ছেড়ে দিবে বলে ভাবছে।কিন্তু তামান্নার সামনে এসএসসি পরীক্ষা।এতদিন পড়িয়ে বাদ দিলে ওরাই কি ভাববে।
কি ভাবে ভাবুক।এত দিনের প্রেমের জন্য তো একটু আধটু ছাড়তেই হবে।কিন্তু সামনে ফরমফিলাফ।মেসের ও দুমাস ভাড়া বাকি।এবার বাসা থেকেই কিছু টাকা আনতে হবে।এইভেবে বাসায় ফোন দিল সে।অনেকক্ষণ রিং হবার পর ছোটবোনটা ধরল।
:কিরে কেমন আছিস?
:ভাল নাই ভাইয়া।
:কি হইছরে আপু?
:আব্বুর হাপানির টান খুব বাড়ছেরে ভাইয়া।ইনহেলার টাও শেষ হয়ে গেছে।
:একটা ইনহেলার কিনে নিতে বল।
:ভাইয়া তোকে তো বলাই হয়নাই,আব্বুর দোকানে চুরি হইছে।রাতের বেলা হাপানির টানে বাড়ি আসছে তখনি চুরি হইছে।
:আমাকে বলিসনাই কেন?
:আম্মু নিষেধ করছিল,তোর পড়ার ক্ষতি হবে।

এরপর বাড়ি থেকে টাকা চাওয়ার প্রশ্নই আসেনা।এদিকে প্রাইভেট নতুন খোজারও সময় নাই। সামনে পরীক্ষা।বাধ্য হয়েই আগের টিউশনিতে গেল।সেখান থেকেই দুমাসের অগ্রীম টাকা নিয়ে ফর্মফিলাফ করল।জেরিনকে বোঝান গেলনা।ও ফোনকরা বন্ধ করে দিল।পরীক্ষা চলছিল।আর বাবার কথা ভেবে পড়ায় মনোযোগ দিল।পরিক্ষা শেষ হলে জেরিনকে গ্রামে গিয়ে বোঝান যাবে।

একমাস পর পর দুইদিনের জন্য বাড়িতে গেল।ছোটবোন এগিয় এসে ঘরে ডেকে নিয়ে বলল,
:ভাইয়া তোর জন্য একটা চিঠি আছে।
:আচ্ছা পড়ে পড়ব আগে জেরিনদের বাসায় গিয়ে ওকে বিকালবেলা নদীরপাড়ে নিয়ে আসবি,যা বলে আয়।
:ভাইয়া চিঠিটা জেরিন আপুই দিছে।
:তুই বলে আয় আগে।
:আজকে ওর গায়ে হলুদ ভাইয়া।ওর বাবা দুবাই প্রবাসীর সাথে বিয়ে ঠিক করেছে।বিয়ে হলে ওরা দুবাই চলে যাবে।

সাহেদ চিঠিটা পড়া শুরু করল,
"শাহেদ আমাকে ক্ষমা কর্।তুমি আমাকে অনেক ভালবাস আমি জানি।তোমার একটু বেশি ভালবাসা পাবার জন্যই আমার অভিমান ছিল।আমার কিছু করার ছিলনা।বাবার দুবার হার্ট এটাকের পর আমাকে জোড় পুর্বক বিয়ে দেয়া হচ্ছে।অবশ্য আমি তোমার ভবিষ্যৎ আর বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি না বলতে পারিনি।তোমার কোন দোষ নেই।ভাল থেক আর ভাল করে পড়াশুনা কর্।আর পাড়লে ক্ষমা করে দিও"

সাহেদ বিকেল আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এই পৃথিবী সাহেদদের জন্যনা।ছেড়া স্বপ্ন আর অভিমানগুলাকে অনেক মিস করবে এটা ভাবতেই সাহেদের চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগল।

- Collected

Saturday, January 11, 2014

" বৃষ্টি ও আমি "

বৃষ্টিস্নাত সকাল, টিপ টিপ বৃষ্টিতে মুখরিত সময়, একটি ছেলে ছাতা নিয়ে হাঁটছে, টিপ টিপ বৃষ্টির মাঝে, মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে চিন্তা করছে... হঠাত্‍ ছেলেটির নজর গেল ২টি পায়ের উপর। ছেলেটি মেয়েটিকে দেখার পর থেকে চিন্তা করল, এই মেয়েটা কি আমার মত পাগল??? বৃষ্টির মাঝে হাঁটতে বের হয়। আরো ভাবলো যে, তার পিছু নেবে কিনা! আরেকটি চিন্তা মাথায় এল এবং চিন্তাটি অহংকার এর পর্যায়ে নিয়ে গেল তাকে, সে ভাবল, ১টা মেয়ের পেছনে পেছনে যাবে কি বুয়েট এর এত মেধাবী প্রোগ্রামার... যে কি না মেয়েদের কখনই পাত্তা দেয় না! তারপর ছেলেটি বাসায় চলে এল।

কিন্তু বাসায় ফিরে সেই ছোট্ট ঘটনাটি ছেলেটির কাছে বড় হয়ে ধরা দিতে থাকল! অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেয়েটির কথা ঘুরে ফিরে আসতে লাগল!! তার মত এমন পাগলাটে মেয়ে সে দেখে নি! আরেকটি খেয়াল মাথায় এল, সে কি বৃষ্টিতে হাঁটতে বেড়িয়েছে তার মত নাকি কাজে যাচ্ছিল, এতকিছু কি ছেলেটির নিছক কল্পনা??? মেয়েটি চেহারার মাঝে মায়াবি ভাব তার চোখ আটকে গেল! তার ভাবনাগুলা আরো বিস্তৃত হতে লাগল, ছেলেটি কখনও মেয়েদের ঐই ভাবে দেখে নি, তাই হয়তো মেয়েটিকে তার এমন ভাল লাগছে। সারাদিন তো প্রোগ্রামিং ছাড়া কিছুতেই মন বসে না, শুধুই নিজের ব্যস্ত সময় থেকে অবসর খুঁজে পায় বৃষ্টির দিনে পথ চলার মাঝে। ছেলেটি সিন্ধান্ত নিল, মেয়েটির সাথে আবার দেখা করবে, তাকে জিজ্ঞাসা করবে, মেয়েটি কি ছেলেটির মতই পাগল! কিন্তু সমস্যাটি হল মেয়েটির দেখা পাবে কোথায়? তা নিয়ে ছেলেটি ভাবতে লাগল। দীর্ঘ ৫টা দিনের অপেক্ষা, তারপরও মেয়েটির নেই কোন দেখা! যে জায়গাটিতে দেখা হয়েছে সে জায়গাটিতেও দেখা হল না তার!

সে দিন হতাশ মন নিয়ে একা পথ হেঁটে যাচ্ছে! আকাশের কালো মেঘ ঘনিয়ে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। দূর থেকে ছেলেটি দেখতে পায় মেয়েটি ছাতা নিয়ে হাঁটছে! ছেলেটি হতবাক হয়ে গেল! কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। যতবারই মেয়েটির কাছে যেয়ে Excuse me বলতে যাবে, ছেলেটির বুকের হৃদপিন্ডের শব্দ বেশী অনুভব করতে পারায় আর বলতে পারে না। এভাবে ভাবতে ভাবতে মেয়েটি কিছু দূর এগিয়ে গেল। বুকে অনেক সাহস জমা করে মেয়েটির কাছে যাওয়া জন্য একটু জোরে পা চালাল! ছেলেটি বলল, "এই যে শুনছেন! আপনার সাথে আমার কথা আছে!!! আপনি এরকম করে বৃষ্টির মধ্যে হাঁটাহাটি করেন কেন? হাঁটাহাটি করলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে!"

অচেনা এক ছেলের মুখ থেকে এই টাইপ কথা শুনে মেয়েটি অবাক!
মেয়েটি উল্টা প্রশ্ন করল, "আপনি তো পাগল দেখছি! আমার মাথায় তো ছাতা আছে!! ভিজছেন তো আপনিই!!! ঠান্ডা তো আপনার লাগবে। উল্টো আমাকে এটা বলছেন!" মেয়েটির মুখ থেকে এরকম কথা শুনে ছেলেটি অপ্রস্তুত হয়ে গেল, কি যে বলবে কিছুই বুঝছে না! ছেলেটি কিছু বলার অপেক্ষায় না থেকেই মেয়েটি হাঁটা শুরু করল। ছেলেটি পুনরায় দৌড়ে গিয়ে বলল, "ইয়ে..মানে..আপনার বাসাটা কোথায়?" চৌরাস্তার পাশের গলিতে না?? মেয়েটি সরাসরি বলে দিল,'না!' ছেলেটি বলতে থাকল,"আমার ১ বন্ধুর পাশের বাসায় হয়তো আপনাকে আমি দেখেছি!" ছেলেটি আন্দাজে কথা বলতে থাকল! মেয়েটি কিছুই বুঝতে পারল না। মেয়েটি বলল, "আপনার মাথা মনে হয় খারাপ হয়ে গেছে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে! বাসায় যান, বিশ্রাম নিন।" ছেলেটি পর পর ৪টা হাচ্চি দিল! ছেলেটির এই অবস্হা দেখে মেয়েটি বলল, এখনও কি আরো ভিজতে চান! আপনার বাসা কই? এখান থেকে যেতে কতক্ষণ লাগবে?" ছেলেটি উত্তর দিল,"আমার কিচ্ছু হবে না! আমি হেঁটে যেতে পারব!" মেয়েটি বলল,"আপাতত ছাতার নিচে আসেন, যতদূর সম্ভব এগিয়ে দেই!"

তারা ২জনই হাঁটছে ১ছাতার নিচে, কেউ কারো সাথে কথা বলছে না, ছেলেটি মাঝে মধ্যে আড় চোখে মেয়েটিকে দেখছে,আস্তে আস্তে মেয়েটির বাসা চলে আসল। ছেলেটির বাসা আরো একটু দূরে হওয়ায় মেয়েটি ছাতাটি তাকে দিয়ে বাসায় ঢুকে গেল। টানা ৪ দিন পর জ্বর থেকে উঠে ছেলেটি ছাতা ফেরত দিতে গেল সেই জায়গাটিতে, সেই সময়ে! মেয়েটি আর আসে না। ছেলেটি হতাশ। চিন্তা করছে মেয়েটির বাসায় যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা! কিন্তু কোন একটা কাজের কথা চিন্তা করে আর যাওয়া হল না! ২দিন পর আবার বৃষ্টি শুরু হল, ছেলেটি সেই ছাতাটি নিয়ে বের হল.. সেই জায়গাটিতে অপেক্ষা করতে লাগল, তাও মেয়েটির দেখা পেল না! মেয়েটির বাসার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখল যে মেয়েটি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত বার করে বৃষ্টির পানি স্পর্শ করছে! ছেলেটিকে দেখে হাতের ইশারায় তাকে দাঁড়াতে বলে নিচে নেমে এল। ছেলেটি জিজ্ঞাসা করল,"আজ আসলেন না কেন?"

মেয়েটি মৃদ্যু হেসে বলল,"আমার ছাতাটি আপনি রেখে দিয়েছেন!"
ছেলেটি হাসল আর বলল,"ওহ!আমি খুবই দুঃখিত।"
মেয়েটি উত্তর দিল,"না থাক, এত দুঃখ পেতে হবে না। কিন্তু এভাবে বৃষ্টিতে আর ভিজবেন না! আপনার মনে হয় ঠান্ডার সমস্যা আছে!"
ছেলেটি হুট করে বলে ফেলল, তাহলে আপনাকে দেখতে পাব কি করে?"
মেয়েটি জিজ্ঞাসা করল,'Sorry??'
ছেলেটি বলল,"কিছু না, এমনিই বললাম আর কি!"
তখন মেয়েটি বলল, "আচ্ছা,আজকে যাই তাহলে, একটু কাজ আছে! আপনার নামটাই তো জানা হল না!"
ছেলেটি উত্তর দিল, 'মেঘ'!উত্তর শোনার পর মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ রইল। মেয়েটি চলে যেতে লাগল কিছু না বলে। ছেলেটি মেয়েটির নাম শুনতে চাইল!
তখন মেয়েটি বলল,"আপনার নামটির সাথে আমার নামটি সম্পৃক্ত!" ছেলেটি সারাদিন চিন্তা করতে থাকল, তার নামকি আসলেই বৃষ্টি??? ছেলেটি এর পর আরেকটি মেঘে ঢাকা বৃষ্টির দিন এর অপেক্ষায় রইল..।।
সংগৃহীত