Monday, April 7, 2014

'মায়াসক্ত'

by- আসলাম মালিক
প্রায় তিন বছর পর তারাকান্দি যাচ্ছি।উদ্দেশ্য মাসুদার সাথে দেখা করব।মনটা তাই খুব খুশি।সেই তিন বছর আগে ওকে দেখেছিলাম,আর দেখা হয়নি।সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সবকিছু বদলে যায়।মেয়েটা কি আগের মতোই আছে নাকি অনেকখানি বদলে গেছে?
মাসুদার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল ওর বিয়েতে।বিয়েটা ওর সম্মতিতেই হয়েছিল।বর উচ্চশিক্ষিত।ভদ্র চেহারার লোকটি সরকারি চাকুরিজীবি ছিলেন।মাসুদার বাবা মেয়ের জন্য একটা সরকারি চাকুরে বরই খুঁজছিলেন।লোকটা ভীষণ ভাগ্যবান।বেঁচে থেকেই নিজের মেজো মেয়েকে পছন্দমতো পাত্রের হাতে তুলে দিতে পেরেছিলেন।পাগলের মতো কি সব ভাবছি!গাড়ি খুব দ্রুত চলছে তবু রাস্তা বেশি মনে হচ্ছে।আর কতদূর...
মাসুদার বাবা যমুনা সার কারখানার একজন কর্মকর্তা।পরিবার সহ তারাকান্দি কলোনীতে থাকেন।মাসুদা সন্তান সম্ভবা।আমি জানি ও এখন কলোনীতেই আছে।মেয়েদের প্রথম সন্তান নাকি তার বাবার বাড়িতে হয়।তাই আমিও কলোনীতেই যাচ্ছি।কারণ ওখানে গেলেই আমি মাসুদার দেখা পাবো।তিন বছর পর আবারও প্রাণভরে দেখব ওকে।ওর অজান্তেই জাগিয়ে তুলবো আমার সুপ্ত ভালবাসাকে।যে ভালবাসার কথা মাসুদা কোনদিন জানেনি-বোঝেনি এমনকি জানতেও চায়নি কখনো।
তারাকান্দির মাটিতে পা রাখার পর বুঝলাম অনেক পাল্টে গেছে আমার প্রিয় এলাকাটা।এ অঞ্চলের মাটির বুকে গজিয়ে উঠেছে অনেক বহুতল ভবন।সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সবই পাল্টায়।মাসুদাও তেমনিভাবে পাল্টে গিয়েছিল।আমি স্বপ্নেও ভাবিনি ও বিয়েতে রাজি হবে।থাক ওসব...
কলোনীর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।ঢুকতে সাহস পাচ্ছি না।কিছু কেনা দরকার।কারণ আজ ওর বাসায় আমি প্রথম যাচ্ছি তাও আবার একটা বিশেষ সময়ে।আচ্ছা মাসুদার ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে?ছেলে হলে আমি খুব খুশি হবো।একসময় ভাবতাম আমার মেয়ের প্রথম কান্না শুনবে মাসুদা।পরম যত্নে আমার মেয়েকে বুকে টেনে নেবে।আমি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখব আমার জীবনের সবচেয়ে মায়াবী মূহুর্ত।কিন্তু তা হয়নি।মানুষের সকল আশা পূর্ণতার ছোঁয়া পায়না।
কলিংবেল টিপে দাঁড়িয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর দরজা খুললো ১৭-১৮ বছরের একটা মেয়ে।ও আমাকে না চিনলেও আমি ওকে ঠিকই চিনেছি।ঝর্ণা,মাসুদার ছোট বোন।আমার মাসুদার আলতাসুন্দরী।কথাটা মনে হয় ভুল বললাম!মাসুদা কি কখনো আমার ছিল?না,ছিলনা।
বাসার সামনে এতগুলো ব্যাগ হাতে অচেনা একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেয়েটা সম্ভবত অবাক হয়েছে।
:ঝর্ণা বলতো আমি কে?
-আপনি রিসাদ ভাইয়া,তাই না?আসুন ভিতরে আসুন...
আমাকে দেখে ও যতখানি বিস্মিত হয়েছে তার চেয়ে বেশি বিস্মিত আমি ওর কথা শুনে।মেয়েটা আমাকে চিনলো কিভাবে?ও তো আজকের আগে আমাকে কখনো দেখেইনি।
এই প্রথম আমি ওদের ঘরের ভিতর পা রাখলাম।সবকিছু কেমন যেন নীরব নীরব!বাসার সবার সাথে পরিচিত হলাম।এর আগে মাসুদার বিয়েতে আমি এসেছিলাম,কিন্তু আমাকে কেউ চিনতো না তখন ও ছাড়া।মাসুদাকে দেখেই চলে গিয়েছিলাম সেদিন।আর আসা হয়নি।সত্যি কথা বলতে আমারই আসতে ইচ্ছে করেনি।ও অবশ্য কয়েকবার বলেছিল।কিন্তু আমি ব্যস্ততার অজুহাতে এড়িয়ে গিয়েছিলাম।
খেয়াল করলাম সবাই যেন কি একটা লুকাচ্ছে আমার কাছে।কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।আমি মাসুদার কথা বলতেই ঝর্ণা আমাকে পাশের ঘরে নিয়ে গেল।সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা দোলনায় ঘুমাচ্ছে।অবিকল মাসুদার প্রতিচ্ছবি!ঝর্ণা বলল,আপুর মেয়ে।আমি ধৈর্য্য হারিয়ে বললাম,মাসুদা কোথায়?ও বলল,চলুন বাইরে যাই ভাইয়া।আমি উত্তর দেয়ার আগেই ঝর্ণা বাইরে চলে গেল।আমিও ওকে অনুসরণ করলাম।মনের মধ্যে একটা খটকা লাগলো।বাসার সবাই মাসুদার বিষয়ে এত নীরব কেন?
ঝর্ণা আমাকে বাড়ির পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছটার কাছে নিয়ে গিয়ে তর্জনী দ্বারা নতুন মাটির দিকে ইঙ্গিত করলো।হঠাত্‍ আমার শরীর অবশ হয়ে গেল।থপ করে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম।নতুন মাটি কৃষ্ণচূড়ায় লাল হয়ে আছে।দু'হাতে মাটি তুলে ঘ্রাণ নেয়ার চেষ্টা করলাম।আশ্চর্য!মাটিতে ঠিক মাসুদার শরীরের ঘ্রাণ।কতক্ষণ বসেছিলাম জানি না।ঝর্ণার হাতের স্পর্শে চেতনা ফিরল।ওর সাথে বাসায় গেলাম।শুনলাম মেয়েটাকে জন্ম দেয়ার সপ্তাহখানেক পরেই মাসুদা চলে গেছে ওপারে।আর শুনলাম,মাসুদার স্বামী নাকি এই মেয়েকে নিতে নারাজ।তার পরিবার নাকি ছেলে চেয়েছিল।হায়রে মানুষ..!
আমি মাসুদার মেয়েটিকে ওদের কাছে চাইলাম।ওরা খুব সহজেই রাজি হয়ে গেল।মাসুদার শেষ ইচ্ছাও নাকি এটাই ছিল।মেয়েটাকে বুকে নিয়ে ওদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।
আমার মেয়েটা এখন কথা বলতে পারে,হাঁটতে পারে।বাবা বাবা বলে ডাকে।রাতে একসাথে খাবে বলে আমার ফেরার পথ চেয়ে বসে থাকে।কিছুদিন যাবত্‍ পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি।দেখি কতদিন এভাবে থাকা যায়।মেয়েটার দিকে তাকালেই দুনিয়াদারী সব ভুলে যাই।শুধু মনে হয় "মায়া" আমার মেয়ে,আমার মাসুদার মেয়ে।

Sunday, April 6, 2014

এরই নাম হয়তোবা ভালোবাসা

by কাজী ওয়ালীউল হাসান
তড়িঘড়ি করে বাস স্ট্যান্ডে প্রবেশ করে সকাল। অলরেডি ৫ মিনিট লেট।বাসটা বুঝি ছেড়েই দিল। নাহ! লেট হয়নি। বরং বাসই লেট। এখনও বাসস্ট্যান্ডে বাস এসে পৌছায় নি। মানুষের ভীড় ঠেলে বাস স্ট্যান্ডের এককোণার চেয়ারে বসে সে। চোখ যায় পাশে বসে থাকা রমনীর দিকে। কথাবার্তা এমনেতেই একটু বেশিই বলে সে। তবুও অপরিচিত একজন মেয়ে; আগ বাড়িয়ে কথা বলাটা ঠিক হবে নাকি বুঝতে পারছে না। আড়চোখে তাকায় মেয়েটার দিকে। চশমা পরা। চোখ জোড়া দেখে মনে হচ্ছে একটু আগে বৃষ্টি বয়ে গেছে তার দুচোখ জুড়ে। এখনও তার আভা রয়ে গেছে। হাতের দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পেল ইয়া বড় একটা ব্যাগ।
চট করে একটা আইডিয়া নিয়ে নিল মেয়েটা সম্পর্কে। সকাল আবার মানুষের বাহ্যিক অবস্হা দেখে ভালো ধারনা নিতে পারে। এই মেয়ে নিশ্চয়ই বাসা থেকে পালিয়েছে। প্রেমিকের জন্য। শেষ মুহূর্তে হয়তো বাবা মা র কথা মনে পড়ছে তাই দু চোখ বেয়ে অশ্রুধারা। নয়তো প্রেমিক ধোকা দিয়েছে । তাই এখন ব্যর্থ মনে বাসায় ফেরত। যে কোন একটা হবেই। - সকাল মনে মনে ভাবে।
“ জিগ্যেস করবো নাকি মেয়েটাকে? নাহ! থাক, কি দরকার ”- মনের ভিতর একটা দোটানা ভাব। সকালের আবার সব কিছুতেই আগ্রহ একটু বেশি। একটু বেশি চটপটে আর কথা বলা টাইপ ছেলে। তবে শেষ পর্যন্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকে সে।
তবে সকাল যে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে তা ঠিকই আঁচ করতে পারে মেয়েটা। চোখদুটা ঘুড়িয়ে সকালের দিকে পড়তেই বিব্রত হয়ে পড়ে সকাল। মাথাটা আস্তে ঘুড়িয়ে নেয় সে।
সকাল প্রাইভেট একটি ফার্মে চাকরি করছে ১ বছর হবে। চট্রগ্রাম যাচ্ছে ছুটি নিয়ে। অনেকদিন মাকে দেখতে যাওয়া হয় না। মা আবার অনেক করে ধরেছে বিয়ে এবার তাকে করতেই হবে।
বাস কখন আসে কোন ঠিক নেই। সময়টা পার করা দরকার। এই মুহূর্তে ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলাই সময় কাটানোর একমাত্র ভালো উপায় মনে হচ্ছে। আসলে মেয়েটার প্রতি একটা কৌতুহল কাজ করছে সকালের। বাসা থেকে পালানোর কাহিনী শুনতে মন চাচ্ছে। কিন্তু কথা কিভাবে শুরু করা যায় তা বুঝতে পারছে না। নাম কিংবা কোথায় যাবেন এটা বলে শুরু করা যেতে পারে।
মেয়েটার দিকে মাথা ঘুরাতেই সে হাওয়া। কই গেল? আশেপাশের মানুষজনও কম মনে হচ্ছে। একটু পরে সকালের চোখ পরে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের দিকে। বাস অবশেষে আসল।
সবাই যে যার টিকেট অনুযায়ী বাসের সিটে বসছে। সকাল যেন তার কাংখিত সিটটাই পেল। তার পাশের সিটটি সেই মেয়ের। ভ্রমনটা মন্দ হবে না- সকাল ভাবে।
- আমি সকাল। আপনার নামটা?
মেয়েটা একটু বিরক্ত হল বুঝাই যাচ্ছে। তবুও সারাটা পথ উনার সাথেই যেতে হবে কথা না বলাটা খারাপ দেখায়।
- আলো।
- ও! মিষ্টি নাম। তা কোথায় যাচ্ছেন?
- চট্রগ্রাম।
- আমিও চট্রগ্রামে। মায়ের বাড়িতে। আপনি?
- আমি চট্রগ্রাম ভার্সিটিতে ৪র্থ বর্ষে পড়ি।
- ও
( সকালের মনটা খারাপ হয়ে গেল। তার ধারনাটা বোধহয় ভুল। মেয়ে বাসা থেকে পালায়ে আসে নাই। কিন্তু তার চোখের পানির রহস্যটা জানার আগ্রহ মোটেও কমলো না। আর কন্ঠও কাঁদো কাঁদো )
বাস ছেড়ে দিয়েছে। আপাতত সকাল আলো দুজনই চুপচাপ।
সকাল ভালো করে আলোর দিকে তাকালো। মেয়েটা আবার কাঁদছে। কোন এক বইতে সে পড়েছে মেয়েরা বেশি আবেগপ্রবন হয়। অনেক চেস্টা করেও নাকি কান্না তারা লুকিয়ে রাখতে পারে না।
- আপনার কি শরীর খারাপ? কাঁদছেন কেন জানতে পারি?
- আমার ইচ্ছা তাই। আপনার কোন সমস্যা?
মেয়েটার এমন কথায় একটু হতবাক হয়ে পড়ল সকাল। কিন্তু বুঝতে বাকি রইলো না এটা অধিক শোকের বহিঃপ্রকাশ। যে করেই হোক কারনটা জানতে হবে। আর এতটা পথ বাসে চুপ করে বসে থাকবে অমন ধৈর্য্য সকালের নেই।
- চুইংগাম খাবেন? আমার পকেটে ২টা আছে। ভাংগতি দিতে পারছিলো না ,তাই দুইটা কিনতে হয়েছিল।
আলো একটু কটমটভাবে তাকালো। কিছু বলা লাগলো না। চোখের ভাষাতেই সকাল বুঝে নিল জবাব।
- দেখেন.. কি সুন্দর সাদা বক। আর ঐ যে ওটা মাছরাঙা। সুন্দর না?
আলো একটুও তাকালো না। পারলে এখনি সিট চেন্জ করে সে। এমন বিরক্তকর লোক পাশে থাকলে ভ্রমনটাই নষ্ট। তবে আজকের ভ্রমন কোন ভ্রমন না। সে জানে সারা রাস্তা জুড়ে তার কান্নাই আসবে। হোস্টেলে কখন যাবে এটাই আশা। আর কখনওই বাসায় যাবে না বলে ঠিক করেছে সে।
সকাল কোনভাবেই মেয়েটাকে কথা বলাতে পারছে না। এদিকে তার জানার আগ্রহটাও বেড়েই চলেছে। মহা বিপদে পরা গেল।
- গান শুনবেন? ........ হেডফোনটা এগিয়ে দেয় সকাল।
- প্লিজ বিরক্ত কইরেন না তো। সমস্যা কি আপনার? আপনি কি পাগল? কখন
থেকে কথা বলেই যাচ্ছেন। আপনার যা ইচ্ছা করুন , আমার সাথে দয়া করে কথা বলবেন না।
আলো মেয়েটা আবার কাঁদা শুরু করেছে। এবার একটু ভয়ই পেয়ে গেল সকাল। বাসের মানুষ কি না কি ভেবে বসে?
মাথাটা জানালার দিকে ঘুরিয়ে নেয় সে। কোন ক্রমেই যেন আলোর দিকে চোখ না পরে। একা মনে চুইংগাম চিবাচ্ছে আর গান শুনছে।
বাসের চাকার শব্দ শোনা যাচ্ছে আর কিছু না । অধিকাংশ যাত্রীই ঘুমে। হেডফোন ভেদ করে মাঝে মাঝে আলোর কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবুও আলোর দিকে আর মুখ ফেরাবে না বলে ঠিক করেছে সে।
লোকটা একদমই চুপ হয়ে যাবে বুঝতে পারেনি আলো। এমন মানুষগুলো খুবই বিরক্তকর হয়। তার ধারনা ছিল একটু পর আবারো বকবক শুরু করবে। কিন্তু সকাল ছেলেটা ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে।
হঠাৎ হাতের স্পর্শে ঘুরে তাকায় সকাল। আলোর হাতের ছোঁয়া।
- চুইংগাম আছে? আমার বমি পাচ্ছে। থাকলে দেন।
সকাল এগিয়ে দেয়। কিন্তু কোন কথা বলে না।
- আসলে আমি সরি , অমন ব্যবহারের জন্য।
- ইটস ওকে।
আর কোন কথা নাই। আলো বুঝতে পারে সকাল নামের ছেলেটা অনেক কিছুই মনে করেছে। ব্যবহারটা হয়তো একটু বেশিই খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
- কি গান শুনেন? আমাকে দেয়া যাবে?
হেডফোনটা এগিয়ে দেয় সকাল। মেয়েটার হঠাৎ এমন কথাবার্তায় অবাক না হয়ে পারছে না। সেটাও বুঝতে বাকি নেই যে মেয়েটাও তার মত কথা না বলে থাকতে পারে না। কোন এক কারনে মেয়েটার মন অনেক বেশি খারাপ।
- আমার মনটা অনেক বেশি খারাপ। আপনার সাথে অমন ব্যবহারের জন্য দুঃখিত।
- কি জন্য খারাপ জানতে পারি?
দুজনই চুপ। আলো কিছু একটা চিন্তা করছে।
- আপনাকে বলা যায় । আপনি আমার পরিচিত কেউ নন। আসলে মানুষ তার কথা কাউকে না বলা পর্যন্ত অস্বস্তিতে ভোগে। আমার মনে হচ্ছে আপনাকে বললে হয়তো হাল্কা লাগবে।
- জ্বী, আপনি যদি চান আমাকে বলতে পারেন।
আবার কারও কোন কথা নেই। হঠাৎ আলোর কন্ঠ--------------
- আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন?
পাগল নাকি মেয়েটা। কথা নেই বার্তা নেই কি বলছে এসব? সকাল মনে করে তার ধারনাটই বোধহয় ঠিক। হয়তো মেয়েকে কোন ছেলে ছ্যাকা দিয়েছে।
- আমি আর আমার বাবার বাড়িতে ফিরে যাব না। এই জগতে আমার আপন বলতে কেউ নেই আর। আমার থাকার জায়গাও নেই। হোস্টেলের চার্জ দেয়াও এখন আমার জন্য অনেক কষ্টের।
(হু হু করে কেঁদে উঠে মেয়েটা)
- কি হয়েছে জানতে পারি? আমাকে খুলে বলতে পারেন চাইলে।
- আমার বাবা আর মায়ের সম্পর্ক কখনওই ভালো ছিল না। আমি তাদের একমাত্র সন্তান। আমার মা আমাকে খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু বাবা আমাকে দেখতে পারেন নাই কখনওই। তাদের মধ্যে ঝগড়ার কারনে মা আমাকে ছোটবেলা থেকেই বাসার বাইরে থেকে পড়িয়েছেন। আর মা ও কখনওই মুখ ফুটে কিছু বলেন নাই সমাজের ভয়ে। এক মাস আগে আমার মা আমাকে একা করে চলে গেছেন ওপাড়ে। কিন্তু আমাকে সংগে নিতে ভুলে গেছেন। আর বাবাও এই বয়সে এসে বিবাহ করেন আরেক মহিলাকে। আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন আমার পড়ার খরচ তিনি বহন করতে পারবেন না, তার অত টাকা নেই। অথচ ঐ মহিলাকে নতুন একটি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন। আমার মায়ের শেষ স্মৃতি গয়না গুলোও পড়িয়েছেন ঐ মহিলাকে। আমি কি জন্য ঐ বাসায় আর যাবো? ঐ বাসার সাথে সম্পর্ক চীরদিনের জন্য ছিন্ন।আমি আমার হোস্টেলে ফিরে যাচ্ছি কিন্তু জানি না খরচ কিভাবে দিব!!যে মানুষটি সারা জীবন আমাকে এবং মাকে কষ্ট দিয়েছে আমি আর কখনওই তার কাছে যাব না। আমি তার কেউ নই। আমাকে শুধু আগাছাই মনে করে। তার জীবনে আমার কোন প্রয়োজনই নেই।
আলো মেয়েটার দুচোখ বেয়ে বৃষ্টি পড়ছে। সকালের চোখও কখন ভিজে গিয়েছে টের পায়নি সে। মনের অজান্তে কখন আলোর ঐ দুই নয়নে সকালের হাত চলে গিয়েছে জানা নেই। মেয়েটার অশ্রু মুছে দিতে একটুও সংকোচ বোধ কাজ করলো না সকালের। কিছু মানুষ হয়তো কষ্টের জন্যই পৃথিবীতে আসে।
------------------------ ------------------------ ------------------------
সকালের সাথে আলোর বিয়ে হয়েছে আজ ২ বছর হবে। আলো তার মায়ের অভাব কখনোই বোধ করেনি এই ২ বছরে। আপন মেয়ের মতই ভালবাসেন সকালের মা। আর বাবা তো মেয়ে মেয়ে করতেই অস্থির। হয়তোবা এটাই ভালোবাসা। যে ভালোবাসার জন্য এতটা পথ কষ্ট করে আসতে হয়েছে আলোর।
মানুষের জীবনে খুব বেশি কিছুর দরকার নেই। কিন্তু যেটা খুব বেশি দরকার তারই নাম ভালোবাসা।