Tuesday, October 6, 2015

আপন

একদিন টিচার খুব আন্তরিকতার সাথেই পাশের মেয়েটাকে বললেন– জননী তোমার কি বিয়ে হয়েছে? মেয়েটা একটু লজ্জা পেয়ে বলল- জ্বী স্যার। আমার একটা দুই বছরের ছেলে আছে।

টিচার চট করে দাঁড়ালেন। খুব হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললেন- আমরা আজ আমাদেরই একজনের প্রিয় মানুষদের নাম জানবো। এই কথা বলেই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললেন – মা আজকে তুমিই টিচার। এই নাও চক, ডাষ্টার।

যাও তোমার প্রিয় দশ জন মানুষের নাম লেখো। মেয়েটা বোর্ডে গিয়ে দশ জন মানুষের নাম লেখলো। টিচার বললেন,

এরা কারা? তাদের পরিচয় ডান পাশে লেখো। মেয়েটা এদের পরিচয় লেখলো।

সংসারের সবার নামের পাশে দুই একজন বন্ধু, প্রতিবেশীর নামও আছে। টিচার এবার বললেন – লিষ্ট থেকে পাঁচ জনকে মুছে দাও। মেয়েটা তার প্রতিবেশী, আর ক্লাশমেটদের নাম মুছে দিলো।
টিচার একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, আরো তিন জনের নাম মুছো। মেয়েটা এবার একটু ভাবনায় পড়লো। ক্লাশের অন্য ষ্টুডেন্টরা এবার সিরিয়াসলি নিলো বিষয়টাকে। খুব মনযোগ দিয়ে দেখছে মেয়েটার সাইকোলজি কিভাবে কাজ করছে। মেয়েটার হাত কাঁপছে।

সে ধীরে ধীরে তার বেষ্ট ফ্রেন্ডের নাম মুছলো। এবং বাবা আর মায়ের নামও মুছে দিলো। এখন মেয়েটা রিতিমত কাঁদছে।

যে মজা দিয়ে ক্লাশটা শুরু হয়েছিলো, সেই মজা আর নেই। ক্লাশের অন্যদের মাঝেও টানটান উত্তেজন। লিষ্টে আর বাকী আছে দুইজন। মেয়েটার হাজবেন্ড আর সন্তান। টিচার এবার বললেন, আরো একজনের নাম মুছো। কিন্তু মেয়েটা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। কারো নাম মুছতে সে আর পারছেনা। টিচার বললেন – মা গো, এইটা একটা খেলা। সাইকোলজিক্যাল খেলা। জাষ্ট প্রিয় মানুষদের নাম মুছে দিতে বলেছি, মেরে ফেলতে তো বলিনি!!!

মেয়েটা কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে ছেলের নামটা মুছে দিলো। টিচার এবার মেয়েটার কাছে গেলেন, পকেট থেকে একটা গিফ্ট বের করে বললেন– তোমার মনের উপর দিয়ে যে ঝড়টা গেলো তার জন্য আমি দুঃখিত।
আর এই গিফ্ট বক্সে দশটা গিফ্ট আছে। তোমার সব প্রিয়জনদের জন্য।

এবার বলো, কেন তুমি অন্য নামগুলো মুছলে। মেয়েটা বলল- প্রথমে বন্ধু আর প্রতিবেশীদের নাম মুছে দিলাম।

কারন তবু আমার কাছে বেষ্ট ফ্রেন্ড আর পরিবারের সবাই রইলো। পরে যখন আরো তিন জনের নাম মুছতে বললেন, তখন বেষ্ট ফ্রেন্ড আর বাবা মায়ের নাম মুছে দিলাম। ভাবলাম, বাবা মা তো আর চিরদিন থাকবে না। আর বেষ্ট ফ্রেন্ড না থাকলে কি হয়েছে?

আমার কাছে আমার পুত্র আর তার বাবাই বেষ্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু সবার শেষে যখন এই দুইজন থেকে একজনকে মুছতে বললেন তখন আর সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।

পরে ভেবে দেখলাম, ছেলেতো বড় হয়ে একদিন আমাকে ছেড়ে চলে গেলেও যেতে পারে। কিন্তু ছেলের বাবাতো কোন দিনও আমাকে ছেড়ে যাবে না।

Friday, October 2, 2015

রোমান্টিক

অল্প বয়স খেকে ছিলাম খুব রোমান্টিক। কিন্তু ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর বাবাকে হারিয়ে ব্যবসার কারণে এবং উচ্চশিক্ষা লাভ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রোমান্স করার সময় বা সুযোগ ছিল না। ইচ্ছা ছিল বিয়ের পরই রোমান্স করবো বৌয়ের সঙ্গে। কিন্তু ত্রিশ বছরে খুব উচ্চ শিক্ষিত ও স্মার্ট বৌ পেলেও বৌ-এর মধ্যে রোমান্টিকতার ছিটাফোটাও নেই। আমার স্ত্রী খুব গুনী । একজন মহিলার বিভিন্ন গুনাবলী যদি বিশ্লেষণ করা যায়, যদি প্রতিটি বিষয়ে ১০০ নাম্বার ধরা হয় তাহলে সে পাবে নিম্নরূপঃ-
          ১. আদর্শ মা------------------------------৮০%
          ২. আদর্শ কন্যা----------------------------৮০%
          ৩. ঘরকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে-----------৯০%
          ৪. রূপচর্চা সাজসজ্জা ও অন্যের কাছে উপস্থাপক---৯০%
          ৫. রান্না করা, বাচ্চার দেখাশোনায়-------------৮৫%
          ৬. আদর্শ স্ত্রী-------------------------------৫০%
          ৭. প্রেমিকা বা রোমান্টিকতায়-----------------১০%
যদিও উপরের মার্কশিট আমার স্ত্রীর পছন্দ হবেনা তবও তাকে এই নাম্বারই দেবো।
কিছু উদাহরণ দিই-
আমার ইচ্ছা যখনই কলিংবেল বাজাবো তখনই সে দরজা খুলে হাসি মুখে স্বাগতম জানাবে। কিন্ত দেখতে পাই তার মুখ নয়, তার নিতম্ব। কোনো মতে, দরজার হুড়কো-টা খুলেই নিতম্ব দোলাতে দোলাতে ভেতরে ঢুকে যায়।
শীতের রাতে লেপের নিচে তাকে জড়িয়ে ধরে শুতে চাই। কিন্তু আমার পাশে শূইলে তার বলে ঘুম হয়না। দুজনে দুপাশে থাকি, মাঝে খাকে কন্যা।
বিয়ের পর পর একবার পাশাপাশি বসে টিভিতে এক সিনেমা দেখার সময় একটা রোমান্টিক দৃশ্য দেখে ভালবাসায় আক্রান্ত হয়ে যখন তার চিবুক ধরে আদর করতে গেছি তখন তার ঝামটা, তোমার জন্য শান্তিতে একটু টেলিভিশন দেখার জো আছে? তোমার কাছে বসলেই খোচা-গুতা!
ওর কথা শুনলে ভালবাসা পালানোর পথ পায় না।
শূনেছি রোমান্টিকতা সংক্রামক। কিন্তু আমার বেলায় তা খাটে না। একবার কােনো এক কারণে তাকে অনেক আদর করার পর যখন প্রতি আদরের অপেক্ষায় আছি তখন সে  জানালো , কাল ছেলের স্কুলে বেতন দিতে হবে যেন আমি ভূলে না যাই। কোন সময়, আর কি কথা!
যাক আমার স্ত্রীর এমন ক্ষমতা যে মাইক্রোওভেনে গরম করা বস্তুকেও মাত্র একটি কথার দ্বারা ডিপ ফ্রিজের বস্তুতে পরিণত করতে পারে। সিনেমা, নাটকের ভালোবাসার দৃশ্যের প্রতি ইঙ্গিত করলে সে বলে, ওসব সিনেমা-না্টকে হয়, তা বাস্তবের জন্য নয়।
আমার সমবয়সী বন্ধুরা যখন সপ্তাহে দুই তিনবার স্ত্রীর সঙ্গে প্রেম করে, আমার দশ দিনেও একবার প্রেম করা হয়ে উঠেনা।
ভালোবাসার কথা বললে তার উত্তরে সে বলে, তোমাকে তো অনুমতি দিয়েই রেখেছি। আরো একটি বিয়ে করো।
আমি পরীক্ষা করে দেখেছি সে আমাকে খুব ভালোবাসে।
আমিও তাকে খুব ভালোবাসি, কিন্তু স্ত্রীর এই অভালোবাসা ও রোমান্টিকহীনতা সুলভ ব্যবহারে খুব কষ্ট পাই। সব খুলে বলেছি, বোঝাতে চেয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আমার এই রোমান্টিক মন কেবলই স্ত্রীর ভালোবাসার জন্য কেঁদে মরে। আমার মত এরকম হয়তো অনেকে আছে, কিন্তু নিরবে কষ্ট পাওয়া ছাড়া কিছু করার নাই।