Wednesday, January 11, 2017

ঘর আর বাইরের নীতি

আমরা অনেক বিচিত্র মানুষ! ঘরের বউ এর জন্য এক নীতি, আবার বাইরের কারো জন্য ভিন্ন নীতিতে বিশ্বাসী। বাইরের কেউ যাকে সে পছন্দ করে বা অনুসরণ করে সে যদি কিছু করে তাহলে তাকে বাহ বাহ দিতে সিদ্ধহস্ত, কিন্তু সেরকম কিছু ঘরের বউ করলে সেটা হয়তোবা ঘোর অন্যায় হিসেবে পরিগনিত হবে। ঘরের বউটা যদি একা বা নিজের মতো করে কোন কারণে বাইরে যেতে চায় তাহলে সেটা বিরাট অপরাধ, কিন্তু সেই আমরা এমন সব মেয়েদের অনুসরণ করি যারা স্বাধীনভাবে চলাচলে অভ্যস্ত। ঘরের বউ যদি সবসময় ফেসবুক পোস্ট দেয় বা অনলাইনে থাকে তাহলে হয়তো সেটা অন্যায় হয়ে যায়, কিন্তু যারা সবসময় ফেসবুকে পোস্ট দেয় তাদের ঠিকই অনুসরণ করি, সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করি, উৎসাহ দিই। বাইরের কেউ পড়াশুনা করলে, চাকুরি করলে বাহ বাহ দিই, কিন্তু নিজের বউ পড়বে বললে বলবে বিয়ের পরে পড়াশুনা করে কি করবে? *অন্য মেয়ে করলে ভালো নিজের বউ করলে খারাপ

Saturday, January 7, 2017

সভ্যতা অর্থনীতির অর্থমূল্যে নয়

পাবলিক বাসে ওঠার একটা আনন্দ আছে। এই আনন্দ যে একবার পেয়েছে সে কখনোই ভার্সিটির বাসে উঠবেনা বলে আমার বিশ্বাস। কিছুদিন আগেই পাবলিক বাসে করে নীলক্ষেত যাবার সময় আমার দেখা হয়েছিল গার্মেন্টসের একটা মেয়ের সাথে। মেয়েটার নাম-সুমি। আশুলিয়ার একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করে সে। ভেবেছিলাম রানা প্লাজা ভেঙে পড়ার পর গার্মেন্টসগুলোর মালিকদের টনক নড়েছে। দেখা গেলো আসলে তেমন কিছুই ঘটেনি!
আমি এতো প্রশ্ন করছি দেখে মেয়েটা ভেবেছে আমি সাংবাদিক। খুব আশা নিয়ে খুলে বলেছে সে তাদের দুঃখ দুর্দশার কথাগুলি। আমি রীতিমতো বোকা হয়ে গেলাম গার্মেন্টসের মেয়েদের ভয়াবহ জীবনের কথা শুনে।
মেয়েটার সাথে কথা বলে জানা গেলো- আগুন নেভানোর যন্ত্র লাগানো ছাড়া আর কোনো কাজ তাদের গার্মেন্টসে হয়নি। বিল্ডিঙয়ে ফাটল আছে। ফাটল ছাড়াও বাচ্চা হওয়ার আগে ম্যাটারনিটি লিভ না দেওয়া, বেতনের বৈষম্য, সুপারভাইজারের যৌন হয়রানি, ওভারটাইমের বেতন বৈষম্য, কথায় কথায় চাকরি থেকে বরখাস্তের হুমকি...সবমিলিয়ে ভয়াবহ অনিশ্চয়তায় ভরা কঠিন একটা জীবন এই মেয়েদের।
দেশের সবচেয়ে বড় আয়ের ক্ষেত্র গার্মেন্টস শিল্প। এই শিল্পের ৯০ ভাগ হচ্ছে মেয়ে। পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা ফ্যাশন হাউসগুলো যে কাপড় দিয়ে পোশাক বানায়, সেগুলি মূলত এই মেয়েদেরই হাতে তৈরি। মূলত এই মেয়েরাই দেশের অর্থনীতির চাকা হয়ে ঘুরছে।
সভ্য দেশ হলে এই মেয়েদের মাথায় তুলে রাখা হতো। বেতন টেতন দিয়ে এলাহি কিছু একটা করা হতো। যেহেতু অসভ্য দেশ, সেহেতু- যাদের দিয়ে এতো আয় তাদেরই জীবন দুর্বিষহ করে দেওয়ার উৎসব!
অর্থনীতিতে জিডিপির হার বেড়ে যাওয়া মানেই সভ্য হয়ে ওঠা নয়। সভ্য হয়ে ওঠা মানে যাদের জন্য এতো নাম হচ্ছে, এতো টাকা হচ্ছে, তাদের মূল্য দেওয়া। সভ্যতা অর্থনীতির অর্থমূল্যে নয়, বিনামূল্যে দেওয়ার জিনিস! বুঝেছ জাতি?